মতিহার বার্তা ডেস্ক : প্রমত্ত পদ্মার দুপাড় জুড়ে দেয়ার মহাযজ্ঞ চলছে মুন্সীগঞ্জের মাওয়া আর শরীয়তপুরের জাজিরা প্রান্তে। পুরোদমে এগিয়ে চলছে পদ্মা সেতু নির্মাণের কাজ। সেতুতে একটি একটি করে স্প্যান বসানোর মধ্য দিয়ে কার্যত দৃশ্যমান হচ্ছে সেতুর কাজ। দক্ষিণ পাড়ের মানুষের অধরা স্বপ্ন ক্রমেই বাস্তবে রূপ নিচ্ছে। যে কারণে দীর্ঘ বঞ্চনার শিকার দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ বেজায় খুশি। সাফল্যের ধারায় নতুন সুখবর- আজ মঙ্গলবার সেতুর জাজিরা প্রান্তে বসলো ১১তম স্প্যান। ৩৩ এবং ৩৪ নম্বর পিলারের উপর ১৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের নতুন এই স্প্যানটি বসানোর পর এখন দৃশ্যমান হলো সেতুর ১৬৫০ মিটার। এর আগে গত ১০ এপ্রিল মাওয়া প্রান্তে বসানো হয় দশম স্প্যান। এবারই প্রথম এক মাসে দুইটি স্প্যান বসানো হলো।
পদ্মার মূল সেতুর প্রকৌশলীরা জানিয়েছেন, সোমবার (২২ এপ্রিল) সকালে কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড থেকে জাজিরায় একাদশ স্প্যানটি নিয়ে যাওয়া হয়। সেতুর আগের ১০টি স্প্যান বসানোর পাশাপাশি সেতুর ২৪৭টি পাইল বসানোর কাজ শেষ হয়েছে। বাকি ৪৭টি পাইলের মধ্যে ১৫টি পাইলের অর্ধেক বসানো হয়ে গেছে।
এর আগে সোমবার (২২ এপ্রিল) সকাল ৮টায় মুন্সিগঞ্জের মাওয়া কন্সট্রাকশন ইয়ার্ড থেকে ৩ হাজার ৬০০ টন ধারণ ক্ষমতার ‘তিয়ান ই’ ক্রেন বহন করে রওয়ানা দেয়। এরপর সকাল সোয়া ১০টায় পৌঁছায় নির্ধারিত পিলারের কাছে।
পদ্মাসেতুর উপ-সহকারী প্রকৌশলী হুমায়ুন কবীর জানান, জাজিরা প্রান্তে সফলভাবে সেতুর ৩৩ ও ৩৪ নম্বর পিলারের ওপর বসানো হয় ‘৬-সি’ স্প্যানটি। পুরো পদ্মাসেতুতে ১১টি স্প্যান বসানোর মাধ্যমে দৃশ্যমান হলো সেতুর এক হাজার ৬৫০ মিটার। এছাড়া মাওয়া প্রান্তে ১৪ ও ১৫ নম্বর পিলারের ওপর বসবে ১২তম স্প্যানটি।এর জন্য মাওয়া কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ডে ‘৩-বি’ রং করা হচ্ছে। তিনি আরও জানান, ২৯৪টি পাইলের মধ্যে ২৫৫ টি কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এছাড়া জাজিরা প্রান্তে রেলওয়ে বক্স স্ল্যাব বসেছে ২৮৮টি, রোডওয়ে বক্স স্ল্যাব ৬টি।
পদ্মাসেতু প্রকল্প সূত্র বলছে, স্প্যান বহনকারী ক্রেনটিকে ৩৩ ও ৩৪ নম্বর পিলারের মধ্যবর্তী স্থানে নোঙর করে রাখা হয়। পজিশন করে রাখার পর ইঞ্চি ইঞ্চি মেপে পিলারের উচ্চতায় উঠানো হয় স্প্যানটিকে। এরপর রাখা হয় পিলারের বেয়ারিংয়ের ওপর। ৩৪ নম্বর পিলারের ওপর রাখা স্প্যানের সঙ্গে জোড়া দেওয়া হবে স্প্যানটিকে। পরবর্তী স্প্যান ‘৬-বি’ সেতুর ৩২ ও ৩৩ নম্বর পিলারের ওপর বসানোর পরিকল্পনা রয়েছে সংশ্লিষ্টদের।
শরীয়তপুরের জাজিরায় এখন দশটি পিলারে (৩৩, ৩৪, ৩৫, ৩৬, ৩৭, ৩৮, ৩৯, ৪০, ৪১ ও ৪২) ৯টি স্প্যান। এছাড়া মাওয়া প্রান্তে (১৩, ১৪ ও ৪, ৫) নম্বর পিলারে একটি স্থায়ী স্প্যান ও একটি অস্থায়ী স্প্যান বসানো হয়েছে।
জাজিরা প্রান্তে ২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর বসানো হয় প্রথম স্প্যান। এর প্রায় চার মাস পর ২০১৮ সালের ২৮ জানুয়ারি দ্বিতীয় স্প্যানটি বসে। দেড় মাস পর ১১ মার্চ এ প্রান্তে ধূসর রঙের তৃতীয় স্প্যান বসানো হয়। দুই মাস পর ১৩ মে বসে চতুর্থ স্প্যান। এক মাস ১৬ দিনের মাথায় পঞ্চম স্প্যানটি বসে ২৯ জুন। তারপর ছয় মাস ২৫ দিনের মাথায় ২০১৯ সালের ২৩ জানুয়ারি বসে ষষ্ঠ স্প্যানটি। এর ২৮ দিনের মাথায় ২০ ফেব্রুয়ারি বসে সপ্তম স্প্যানটি। এর একমাস পরে ২২ মার্চ বসে অষ্টম স্প্যানটি। নবম স্প্যান বসানোর ১৯ দিনের মাথায় ১০ এপ্রিল বসে দশম স্প্যানটি। আর মাওয়া প্রান্তে একটিমাত্র অস্থায়ীভাবে স্প্যান বসানো হয় ২০১৮ সালের ১২ অক্টোবর।
৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এ বহুমুখী সেতুর মূল আকৃতি হবে দোতলা। কংক্রিট ও স্টিল দিয়ে নির্মিত হচ্ছে এ সেতুর কাঠামো।
মতিহার বার্তা ডট কম – ২৪ এপ্রিল, ২০১৯
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.